SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার | NCTB BOOK

৭.৩.১ ক্ষারকের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

অষ্টম শ্রেণিতে তোমরা ক্ষারক ও ক্ষার কী তা জেনেছ। এখন এ অধ্যায়ে এদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য জানা যাক।নির্দেশকের সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে রং পরিবর্তন: তোমরা সবাই জান সকল ক্ষারক লাল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন করে নীল করে। এছাড়া আরো কিছু নির্দেশক আছে, যেগুলো নিয়মিতভাবে পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত হয়। (যেমন- মিথাইল অরেঞ্জ, মিথাইল রেড, ফেনলফথেলিন) এগুলোও রং পরিবর্তন করে। টেবিল; ৭,০১ এ কোন ক্ষারক নির্দেশকের কী ধরনের রং পরিবর্তন করে তা দেখানো হলো।

টেবিল ৭.০১: ক্ষারক ও নির্দেশকের বিক্রিয়ার ফলে রং পরিবর্তন

নির্দেশক

নির্দেশকের রং

কমলা

ক্ষারকের ধারণকৃত রং

হলুদ

লাল লিটমাস কাগজ

মিথাইল অরেঞ্জ

মিথাইল ব্লেড

ফেনলফথেলিন

গোলাপি

পানিতে দ্রবণীয় ক্ষারক অর্থাৎ ক্ষারসমূহ পানিতে হাইড্রঅক্সাইড আয়ন (OH) উৎপন্ন করে।

NaOH → Nat KOH + OH K+ + OH

NHOH—) NHA + OH

ক্ষারক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ উৎপন্ন করে। ক্ষারক ও এসিড পরস্পর বিপরীতধর্মী পদার্থ এবং বিক্রিয়া করে একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে নিরপেক্ষ পদার্থ লবণ ও পানি তৈরি করে। পরে তোমরা আরো বিস্তারিতভাবে এই বিক্রিয়া শিখৰে।

দলগত কাজ

কাজ: ক্ষারকের রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে জানা (চিত্র 9.30 ) ।

অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার

প্রয়োজনীয় উপকরণ: ক্ষারক (চুন বা Ca(OH)2), এসিড (ভিনেগার) এবং একটি নির্দেশক ( লাল লিটমাস কাগজ বা ফেনলফথেলিন), বিকার বা কাচের বোতল।

পদ্ধতি: বিকারে বা কাচের বোতলে ৫০ মিলিলিটার চুনের প্রবণ নাও। লাল লিটমাস কাগজ দ্রবণে ডুবাও। লিটমাস কাগজটি নীল হয়ে গেল, তাইতো? এতে প্রমাণিত হলো যে ক্ষারক লাল লিটমাসকে নীল করে। এবার ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ভিনেগার বিকারে নেওয়া Ca(OH), প্রবণ যোগ কর এবং নাড়াতে থাকো। নীল লিটমাস কাপজটি দ্রবণে ডুবিয়ে কোনো পরিবর্তন হয় কি না দেশ। প্রথম দিকে চিত্র ৭১০ : ক্ষারকের রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে জানা দেখৰে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কমপিত ভিনেগার যোগ করতে থাক আর লিটমাস কাগজ দিয়ে রং পরিবর্তন হয় কি না খেয়াল করো। এক পর্যায়ে দেখবে নীল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তিত হয়ে লাল হয়ে গেল। কেন এমন হলো? কারণ হলো, এসিড যোগ করাতে তা আস্তে আস্তে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করছে। এভাবে যখন সমস্ত Ca(OH), বিক্রিয়া করে ফেলেছে, তখন এসিড যোগ করার ফলে দ্রবণটির এসিডিক হয়ে গেছে আর সে কারণেই নীল লিটমাস লাল হয়ে গেছে।

সাবান বার লাল লিটমাস পেপার সাবানেরক্ষারের প্রভাবে নীল হয়ে যাচ্ছে,

৭.৩.২ প্রাত্যহিক জীবনে ক্ষারের ব্যবহার ও সাবধানতা

তোমরা কি জান, মৌমাছি হুল ফুটালে বা পিঁপড়া কামড় দিলে জ্বলে কেন, ফুলে যায় কেন? কারণ হলো, পিঁপড়ার কামড়ের মাধ্যমে মূলত ফরমিক এসিড নিঃসৃত হয়, যা আমাদের শরীরে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। আর মৌমাছি হুল ফুটালে ফরমিক এসিড, মেলিটিন (Melittin) এবং অ্যাপামিন (Apamin) নামক এসিডিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যার কারণে জ্বালাপোড়াও হয় আবার আক্রান্ত স্থান ফুলেও যায়।

চিত্র ৭.১১ : সাবানের ক্ষারকর পরীক্ষা

এখন প্রশ্ন হলো পিপড়া কামড়ালে বা মৌমাছি হুল ফুটালে করণীয় কী?

যেহেতু এসব ক্ষেত্রে জ্বালাপোড়ার কারণ হচ্ছে এসিড, তাই আমরা এসিডকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এরকম মলম, লোশন (যেমন চুন) ব্যবহার করতে পারি। এরকম আরো একটি লোশন হলো ক্যালামিন (Calamine), যা মূলত জিংক কার্বোনেট (ZnCO3)। বেকিং সোডা ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।মাটির এসিডিটি দূর করতে ক্ষার: তোমরা আগেই জেনেছ, মাটিতে এসিডিটি বাড়লে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। তখন ক্ষারক ব্যবহার করে এসিডিটিকে প্রশমিত করা যায় এবং উর্বরতা ফিরিয়ে আনা যায়। এক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত ক্ষারক হলো চুন (CaO) এবং মিল্ক অব লাইম (Ca(OH)2)। অবশ্য এ কাজে চুনাপাথরও (CaCO3) ব্যবহার করা হয়।

বাসাবাড়িতে পরিষ্কারক হিসেবে প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড ব্যবহৃত হয়। টুথপেস্ট বা টুথ পাউডার আমাদের নিত্যদিনের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু, যা ক্ষারীয়। খাওয়ার পরে সাধারণত আমাদের মুখে এসিডীয় অবস্থা তৈরি হয়। আর টুথপেস্ট বা পাউডার দিয়ে ব্রাশ করলে একদিকে যেমন দাঁত পরিষ্কার হয়, অন্যদিকে তেমনি পেস্ট বা পাউডারের ক্ষার সৃষ্ট এসিডকে নিষ্ক্রিয় করে। ফলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয় ।

আবার থালা-বাসন পরিষ্কার করার জন্য যে শক্ত সাবান বা তরল সাবান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতেও ক্ষারক থাকে (চিত্র ৭.১১)। এমনকি আমরা যে কাপড় কাচার সাবান ব্যবহার করি, তা–ও তৈরি করা হয় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও চর্বি বা তেল থেকে। একইভাবে শেভিং ফোম বা নরম সাবান তৈরি করা হয় পটাশিয়াম হাইডোক্সাইড ও চর্বি বা তেল থেকে।

তোমরা জান যে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বা এসিডিটির কারণে আমরা যে এন্টাসিড খাই তা হলো ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Mg(OH)2) ও অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (Al(OH)3) নামের ক্ষার। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে ক্ষারক বা ক্ষারসমূহ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কাজে লাগে।ক্ষার ও ক্ষারক ব্যবহারে সাবধানতা: তোমরা নিজের হাতে কখনো নিজেদের জামাকাপড় পরিষ্কার করে দেখেছ কী ঘটে? একটু বেশি কাপড় একসাথে পরিষ্কার করলে দেখা যায়, হাতের তালু থেকে একটু একটু চামড়া উঠে যায়। এর জন্য দায়ী হলো সাবানে থাকা ক্ষার। এসিড যেমন মানুষের শরীরের ক্ষতি করতে পারে, তেমনি ক্ষারও শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই শক্তিশালী ক্ষারীয় দ্রব্যাদি নিয়ে কাজ করার সময় হাতে রাবারের মোজা এবং গায়ে অ্যাপ্রোন পরা উচিত।

অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার

৭.৩.৩ প্রশমন এবং এর প্রয়োজনীয়তা

পাকস্থলীর এসিডিটির জন্য পেটের ব্যথা হলে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড নামক এন্টাসিড খেলে ব্যথা সেরে যায় কেন? কারণ হলো, এসিডিটির জন্য দায়ী হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইডের প্রশমন বিক্রিয়া ঘটে, যার ফলে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং ব্যথা আর থাকে না। বিক্রিয়াটি নিচে দেখানো হলো:

এসিড ক্ষার

+

→ লবণ

+ পানি

2HCl + Mg(OH)2 3HCl MgCl2 + 2H2O

+

Al(OH)3

AlCl3 + 3H20

আবার চুন (CaO) ও স্ল্যাক লাইম [Ca(OH)2] দিয়ে মাটির যে এসিডিটি দূর করে উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়, সেটিও হয় প্রশমন বিক্রিয়ার মাধ্যমে, যা নিচে দেখানো হলো:

ক্ষার + এসিড

লবণ +

পানি

CaO H2SO4 + CaSO4 + H2O Ca(OH)2 + H2SO4CaSO4 + 2H2O

তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ, খাওয়ার পর আমাদের মুখে এসিড তৈরি হয় আর টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে এসিডের কারণে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। এখানেও কিন্তু একধরনের প্রশমন বিক্রিয়াই ঘটে। টুথপেস্টের pH সাধারণত ৯-১১ এর মধ্যে হয় অর্থাৎ এরা ক্ষারীয় এবং এতে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, বেকিং সোডা, টেট্রাসোডিয়াম পাইরোফসফেট জাতীয় পদার্থ থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রশমন বিক্রিয়া আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

Content added || updated By

Promotion